অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং


অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং একজন অগ্রণী কম্পিউটার প্রকৌশলী, গণিতজ্ঞ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক, গোপন সংকেত বিশেষজ্ঞ, গাণিতিক জীববিজ্ঞানী এবং ম্যারাথন দৌড়বিদ ছিলেন। কম্পিউটার প্রকৌশলের বিকাশে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি তাঁর টুরিং মেশিনের মাধ্যমে গণনা ও অ্যালগোরিদম এর ধারণার প্রচলন করেন। টুরিংকে তাত্ত্বিক কম্পিউটার প্রকৌশল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।


Related image

ছেলেবেলা

টিউরিং তার মায়ের গর্ভে আসেন ১৯১১ সালে ভারতের উরিষ্যার চাত্রাপুরে। তার বাবা জুলিয়াস ম্যাথিসন টিউরিং ছিলেন ভারতীয় লোক প্রশাসনের একজন সদস্য। জুলিয়াস এবং তার স্ত্রী সারা নেই স্টোনি। মাদ্রাজ রেলওয়ের প্রকৌশলী এডওয়ার্ড ওয়েলার স্টোনির কন্যা তাদের সন্তানকে ইংল্যান্ডে বড় করতে চেয়েছিলেন, তাই তার লণ্ডনের মাইডা ভেলে ফিরে আসেন যেখানে টুরিং এর জন্ম হয় ২৩শে জুন, ১৯১২ সালে। তার ভাই জন ছিল তার থেকে বড়। তার বাবার লোক প্রশাসন কমিশন তখনো কার্যকর ছিল এবং টিউনিং এর ছেলেবেলায় তাদের অভিভাবকেদের সন্তানদের বন্ধুদের কাছে রেখে ইংল্যান্ডের গিল্ডফোর্ড এবং ভারতের মধ্যে প্রায়ই যাতায়ত করতে হত। ।

তার অভিভাবকেরা তাকে ছয় বছর বয়সে দিবা বিদ্যালয় সেণ্ট মাইকেল’স এ ভর্তি করিয়ে দেন। প্রধান শিক্ষিকা তার প্রতিভাকে শুরুতেই অণুধাবন করেন যেভাবে তার অনেক সমসাময়িক শিক্ষকেরা পেরেছিলেন। ১৯২৬ সালে চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি ডরসেট ডরসেটের শেরবর্ন স্কুলে ভর্তি হন। তার পর্বের প্রথম দিন ইংল্যান্ডের  সাধারণ ধর্মঘট থাকার পর ও তার প্রতিজ্ঞার কারণে তিনি একাই সাউথহ্যাম্পটন থেকে ৬০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্কুলের কাছে পৌছান। মাঝপথে তাকে একটি হোটেলে বিশ্রাম নেবার জন্য থামতে হয়- ঘটনাটিকে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়। গণিত ও বিজ্ঞানে টিউনিং এর আগ্রহ জনপ্রিয় এবং ব্যয়বহুল পাবলিক স্কুল সেরবর্নের শিক্ষকদের নজর কাড়তে পারেনি। এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাব্যবস্থা প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান ভাষা এবং সাহিত্য শিক্ষা এর দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তার প্রধান শিক্ষক তার অভিভাবকদের লেখেন: আমি আশা করি যেন সে দুটি শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে না পরে। সে যদি পাবলিক স্কুলে থাকে চায়, তবে তাকে অবশ্যই শিক্ষিত হবার দিকে নজর দিতে হবে। সে যদি শুধু বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ হতে চায় তবে পাবলিক স্কুলে সে তার সময় নষ্ট করছে। কিংস কলেজের কম্পিউটার রুমের নাম বর্তমানে টুরিং এর নামানুসারে রাখা হয়েছে, তিনি ১৯৩১ সালে এখানে ভর্তি হয়ে ১৯৩৫ সালে ফেলো হন। অন্যদিকে টিউনিং তার অসাধারণ সক্ষমতার সাক্ষর রেখে চলে তার আগ্রহের বিষয়গুলোতে। ক্যালকুলাসের মূল বিষয়গুলো না জেনেই সে উন্নত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে থাকে। ১৯২৮ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি আলবার্ট আইস্টাইনের কাজের সংস্পর্শে আসেন; তিনি তা অধ্যয়ন করার পাশাপাশি নিউটনের গতি সূত্র সম্পর্কে আইনস্টাইনের সন্দেহ অণুধাবন করতে শুরু করেন এমন একটি লিখিত অংশ থেকে যেখানে এটি একদমই পরিষ্কার করা ছিল না।

টিউরিং এর আশা ও আকাঙ্ক্ষার বিস্তৃতি ঘটে তার বন্ধু ক্রিস্টোফার মরকমের মাধ্যমে, যাকে সে ভালবেসে ফেলে। অবশ্য তা দ্বিমুখী ছিল না। মরকম মারা যায় সেরবর্নে তাদের শেষ পর্ব শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।


Related image

অবদান

কম্পিউটার বিজ্ঞানে টুরিং এর অবদান অনস্বীকার্য। এই ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় পুরস্কার “দ্য টুরিং অ্যাওয়ার্ড” তার নামে দেয়া হয়। নোবেল প্রাইজ যেমন রসায়ন অথবা ফিল্ডস মেদাল যেমন গণিতের শাখায় দেয়া হয়, ঠিক তেমনি এই অ্যাওয়ার্ড কম্পিউটার বিজ্ঞানের শাখায় বিভিন্ন অবদানের কারণে দেয়া হয়ে থাকে।






সুত্রঃ www.turing.org.uk

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.