লুই পাস্তুর এবং তাঁর গবেষণা প্রক্রিয়া (দ্বিতীয় পর্ব)
এখানে এসে তিনি এক শক্ত পাথরের দেয়ালের মাঝে ধাক্কা খেলেন। কিছুতেই এই অদৃশ্য কারণকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। একটা ব্যাক্টেরিয়াকে কৃত্রিম পুষ্টি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়, বংশবৃদ্ধি বা কালচার করা যায় কিন্তু এই অদৃশ্য পরজীবী প্রাণটিকে কোনোভবেই ল্যাবরেটরির টেস্টটিউবে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। লুই পাস্তুর আবার খাঁটি বিজ্ঞানীর মতো ভাবলেন যদি তাকে কৃত্রিম অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখা না-ই যায় - তাকে তাহলে জীবন্ত কোথাও বাঁচিয়ে রাখা হোক। সেই জীবন্ত অংশ্তুকু হলো খরগোশের মস্তিষ্ক। আবার লুই পাস্তুরের ধারণা সত্যি প্রমাণিত হলো, খরগোশের মস্তিষ্কে এই অদৃশ্য জীবাণু শুধু বেঁচে থাকে না আরও ভয়ংকর আরও সর্বনাশী হয়ে উঠে, ছয়দিনের মাঝে এই রোগ তাঁর সর্বগ্রাসী উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয়।
র্যাবিজ ভাইরাস |
লুই পাস্তুর এখন গবেষণার শেষ ধাপে এসে পৌঁছেছেন, এমন একটা প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা যেটা দিয়ে এই রোগের প্রতিষেধক বের করা যায়। একদিন ল্যাবরেটরিতে ঘুরতে-ঘুরতে হঠাৎ দেখলেন তাঁর একজন সহকারী জলাতঙ্ক আক্রান্ত একটা খরগোশের স্পাইনাল কর্ড কাচের ফ্লাস্কে ঝুলিয়ে রেখেছেন, কতদিন এই ভয়ংকর জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে সেটাই হচ্ছে পরীক্ষার উদ্দেশ্য। লুই পাস্তুর কাঁচের ফ্লাক্সের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন, কিছুদিন আগেই মোরগের কলেরা রোগের ব্যাক্টেরিয়াকে অক্সিজেন দিয়ে দুর্বল করে ভ্যাক্সিন হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এখানেও সেটি কি করা যায় না? যে অদৃশ্য জীবাণূকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে কোন সন্দেহ নেই সেটাকে কী দুর্বল করে এর প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ ব্যবহারিক বিজ্ঞানী তখন কাজে লেগে গেলো। খরগোশের স্পাইরাল কর্ডে বেঁচে থাকা জীবাণুকে অক্সিজেন দিয়ে দুর্বল করতে লাগলেন। প্রতিদিন সেখান থেকে একটা অংশ নিয়ে সেটাকে গুঁড়ো করে সুস্থ খরগোশের মাথার ইনজেকশন দিতে শুরু করলেন। যতই দিন যেতে লাগল এই ভয়ংকর জীবাণু ততই দুর্বল হতে শুরু করল, বারোদিন পর জীবাণু এত দুর্বল হয়ে গেল যে, সেটা সুস্থ প্রাণিকে সংক্রমণ করতেই পারল না। এখন আসল পরীক্ষাটি বাকী, এই প্রক্রিয়ার সত্যিই কী জলাতঙ্কের প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব? লুই পাস্তুর পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করলেন। একটা কুকুরের মস্তিষ্কে প্রথমে বারো দিনের দুর্বল জীবাণু প্রবেশ করানো হলো। তারপর দিন এগারো দিনের জীবাণু পরের দিন দশ দিনের জীবাণু। এভাবে প্রত্যেক দিনই আগের থেকে একটু বেশি ভয়ংকর জীবাণু কুকুরের মস্তিষ্কে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। বারো দিনের দিনের দিন একেবারে খাঁটি টগবগে জীবাণু কুকুরের মস্তিষ্কে ইনজেকশন দেয়া কিন্তু এতদিনে কুকুরটির দেহে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক তৈরি হয়ে গেয়েছে। এই ভয়ংকর জীবাণু নিয়েও সেটি বহাল তবিয়তে বেঁচে রইল। লুই পাস্তুর জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক বের করেছেন তবে মানুষের জন্যে নয় পশুর জন্যে।
ঠিক এ-রকম সময়ে নয় বছরের জোসেফ মাইস্টারকে নিয়ে তাঁর মা এলেন লুই পাস্তুরের কাছে, আকুল হয়ে লুই পাস্তুরকে বললেন তাঁর ছেলেকে বাঁচিয়ে দিতে। লুই পাস্তুর খুব চিন্তার মাঝে পড়ে গেলেন, নয় বছরের এই বাচ্চাটির শরীরে নিশ্চিতভাবেই জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু ঢুকে গিয়েছে, একজনের শরীরে জীবাণু ঢোকার পর তাঁর শরীরের কী প্রতিষেধক তৈরি করা যাবে? যে প্রক্রিয়া কখনো কোনো মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা হয় না সেটি কী একটা শিশুর শরীরে পরীক্ষা করা যায়? অনেক ভেবেচিন্তে তিনি পরীক্ষাটি করার সিদ্ধান্ত নিলেন! প্রথমে দুই সপ্তাহে পুরোনো জীবাণু তারপর তেরো দিনের তারপর বারোদিনের। এভবে যতই দিন যেতে লাগল ততই আগ্রাসী জীবাণু ঢোকানো হলো সেটি অন্য যে কোনো পশু বা মানুষকে এক সপ্তাহের মাঝে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে! সেই সময়টা সম্ভবত ছিল লুই পাস্তুরের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়- তিনি খেতে পারতেন না ঘুমাতে পারতেন না। লুই পাস্তুরের মাথায় শুধু একটা চিন্তা ছেলেটি কি বাঁচবে না মারা যাবে?
না, ছেলেটি মারা যায় নি। লুই পাস্তুরের চিকিৎসায় পৃথিবীর প্রথম জলাতঙ্ক রোগীটি বেঁচে উঠল। বিজ্ঞানের ইতিহাসে লুই পাস্তুরের এই অবিস্মরণীয় অবদানটি সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে!!
জোসেফ মাইস্টার তাঁর প্রাণ বাঁচানোর কারণে সারা জীবন লুই প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। সে বড় হয়ে লুই পাস্তুরের ল্যাবরেটরির দ্বাররক্ষীর দায়িত্ব নিয়েছিলো। নাৎসি জার্মানি যখন ফ্রান্স দখল করে নেয় তখন নাৎসি বাহিনী লুই পাস্তুরের ল্যাবরেটরি দখল করতে আসে। জোসেফ মাইস্টার গেটের দরজার দাঁড়িয়ে থেকে ল্যাবরেটরি রক্ষা করার চেষ্টা করে।
জার্মান সেনাবাহিনীর গুলিতে জোসেফ মাইস্টারের মৃত্যু হওয়ার আগে সে কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয় নি।
1xBet Korean Sportsbook Review And Bonus Code 2021
উত্তরমুছুনWhat 1xbet korean is the 1xbet Korean Sportsbook Review and kadangpintar how is the site different from other 1xbet bookies? If you are a fan of this betting site, you might หารายได้เสริม wish to