ঘুমের কলকব্জা

আমাদের জীবনে যে কয়টা নিয়মিত বিষয় আছে ঘুম হচ্ছে তাঁর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি। আমাদের সবার প্রত্যেকদিন ঘুমাতে হয়। কেউ একটু বেশি ঘুমায় কেউ একটু কম। বিজ্ঞানী টমাস আল্ভা এডিসন ঘুমটাকে সময় নষ্ট বলে মনে করতেন তাই তিনি রাতে মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমাতেন। আবার বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলতেন রাতে যদি তিনি দশ ঘণ্টা না ঘুমান তিনি ঠিক করে কাজ করতে পারেন না। যেহেতু ২৪ ঘন্টার মাঝে সবাইকে একবার হলেও ঘুমাইতে হয় তাই সবারই জানা উচিত তাঁর আসলে কতটুকু ঘুমের দরকার। দেখা গেছে যার যতটুকু ঘুমের দরকার সে যদি তাঁর থেকে কম ঘুমায় তাহলে সে হয়তো এক দুই ঘন্টা বাঁচিয়ে ফেলে ঠিকই কিন্তু আসলে খুব একটা লাভ হয় না। কম ঘুমানোর কারণে সে সারা দিন ঘুমঘুম ভাব নিয়ে থাকে, তাঁর মাঝে সতেজ উৎফুল্ল ভাবটা থাকে না, খিটখিটে মেজাজ হয়ে থাকে বলে সে আসলে যতটুকু কাজ যত সুন্দর ভবে করতে পারত তাঁর কিছুই পারে না। 



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গবেষণা করে দেখেছে কম ঘুমানোর কারণে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে সেই দেশে বছরে প্রায় দুই লক্ষ এক্সিডেন্ট হয়ে মানুষ মারা যায় প্রায় পাঁচ হাজার। একটা সময় ছিল যখন দিনের বেলা সবাই কাজকর্ম করতো, রাত্রিবেলাটি ছিল বিশ্রামের। লাইট বাল্ব আবিষ্কার হওয়ার পর হঠাৎ করে রাত আর রাত থাকল না। বলা যায় রাতারাতি দিন রাতের পার্থক্যটা ঘুচে যাওয়ায় মানুষের ঘুমের সময় কমে এল। পৃথিবী এখন রাতে ঘুমায় না, রাতের পৃথিবী সচল রাখার জন্যে মানুষকে অনেক কাজ করতে হয়। দেখা গেছে যারা রাতে কাজ করে তাদের অর্ধেক মানুষই কখনো কখনো কাজের মাঝে ঘুমিয়ে পরে। কাজের ক্ষতি হয়, এক্সিডেন্ট হয়, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ শুধূ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বছরে সত্তর বিলিয়ন ডলার । শুধু যে আর্থিক ক্ষতি তা নয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুটি নিউক্লিয়ার এক্সিডেন্ট চেরনোবিল এবং থ্রি মাইল আইল্যান্ড হয়েছিল ভোররাতে, যখন মানুষ হয় সবচেয়ে ঘুমকাতুরে সবেচেয়ে ক্লান্ত। দু জায়গাতেই দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছিল কারণ রাতের শিফটের কর্মকর্তারা বিপদ সংকেতগুলো সময়মতো ধরতে পারে নি
আধুনিক পৃথিবীতে আমরা এখন শুধু ছুটছি, আমাদের বিশ্রাম নেবার সময় নেই। আমরা চেষ্টা করি কম সময় ঘুমিয়ে কত বেশি কাজ করা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ঘুম নিয়ে গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন যে, ঘুম এমন একটি বিষয় যে এখানে ফাঁকি দেবার কোনো সুযোগ নেই। একজন মানুষের যেটুকু ঘুমের প্রয়োজন তাঁকে ততটুকু ঘুমাতেই হবে, যদি না ঘুমায় তাঁকে জীবনের অন্য জায়গায় অনেক মুল্য দিতে হবে।

যেমন, পরীক্ষার আগে অনেক ছাত্র-ছাত্রী প্রায় সারারাত পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিতে যায়। তাঁরা নিজের অজান্তেই নিজেদের অনেক বড় ক্ষতি করে বসে থাকে, সারারাত জেগে তাঁরা যেটি পড়ে সেই বিষয়টা তাদের মস্তিষ্কে নাড়া চাড়া করে। কিন্তু না ঘুমানোর কারণে তাঁরা মস্তিষ্কে সেটা পাকাপাকিভবে বসাতে পারে না। তাই পরীক্ষার হলে যখন সেই তথ্যের প্রয়োজন হয় তাঁরা আবিষ্কার করে সেটি তাদের মস্তিষ্কে নেই !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.