আমরা কি সত্যিই একা? (প্রথম পর্ব)

এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে মানুষ ছাড়াও অন্য কোন বুদ্ধিমান প্রাণী আছে কিনা এই বিষয়টি থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে নিউট্রিনোর ভর আছে কিনা এবং যদি থেকে থাকে সেটা কত ? কিন্তু এই সৃষ্টিজগতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণি আছে কিনা, এই বিষয় নিয়ে কৌতূহল অনেক দিনের। একসময় ধারনা করা হতো, সূর্যের প্রখর উত্তাপ বাহিরে, ভেতরে পৃথিবীর মতো শান্তিময় পরিবেশ। সেখানে বুদ্ধিমান প্রাণিরা বসোবাস করে। সূর্যের গঠনটা বুঝে নেবার পর এখন আর সেটা কেউ বিশ্বাস করে না। পৃথিবীর কাছাকাছি ছোট গ্রহগুলো হচ্ছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল। পৃথিবীতে আমরা সবাই আছি এবং সব সময়ই কল্পনা করছি অন্য গ্রহগুলোতে হয়তো আমাদের মতো কেউ আছে। এখন আমরা জেনেছি ভয়ঙ্কর উত্তপ্ত বুধ গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটা সম্ভব নয়। শুক্র গ্রহে মেঘে ঢাকা উত্তপ্ত প্রাণ সৃষ্টি অনুপযোগী একটা গ্রহ। মঙ্গল গ্রহ প্রতিযোগিতায় খুব দুর্বলভাবে টিকে আছে। বড় বড় চোখ, কিলবিলে হাতপা, ধারালো দাঁত এই ধরনের পূর্ণ বিকশিত প্রাণির আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু জীবাণূ আকারের কিছু একটা আছে কী না কিংবা এখন না থাকলে অতীতে কখনো ছিল কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা মাঝে মাঝে চাঙ্গা হয়ে উঠে।



মানুষ ছাড়া সৃষ্টি জগতে অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণি আছে কিনা সেটা নিয়ে কৌতূহল যুক্তিসম্মত এবং সেটা বের করার জন্যে একটি প্রতিষ্ঠানও আছে তাঁর নাম SETI তাঁরা কোটি কোটি ডলার খরচ করে মহাজগতে ক্রমাগত প্রাণের সন্ধান করে যাচ্ছে। মুলত মহাজগত থেকে যে বিভিন্ন ধরনের সংকেত আসে তাঁর মাঝে কোনো বুদ্ধিমত্তা আছে কিনা সেটাই পরীক্ষা করে দেখা।  ধারণা করা হয়, যদি সে-রকম কিছু পাওয়া যায় বুঝে নিতে হবে সেটা পাঠাচ্ছে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী। এটা নিয়ে অনেক বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখা হয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু পাওয়া যায় নাই। তবে বিজ্ঞানীরা যে মহাজাগতিক প্রাণী বলে কিছু নেই সেটা পুরাপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন তা নয়। ভয়েজার মহাকাশযানগুলো আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করে সৌরজগতের বাহিরে চলে গেছে। সেখানে মানব-মানবীর ছবিসহ আরও অনেক কিছু পাঠানো হয়েছে, কোনো একটি বুদ্ধিমান প্রাণী কোনো একদিন সেটা খুঁজে পাবে সেই আশায়!

পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও প্রাণ খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা করা হয় নি, তা নয়। এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ড্রেকের সমীকরণ। এই সমীকরণে বলা হয়েছে এই মুহুর্তে যে কয়টি বুদ্ধিমান প্রাণীর জগৎ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে তাঁর সংখ্যা N হচ্ছে : N = RxPxExLxIxT
এখানে R হচ্ছে গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের সংখ্যা, P হচ্ছে একটা নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহ পাবার সম্ভাবানা, E হচ্ছে এ-রকম গ্রহ থেকে থাকলে প্রাণ বিকাশের উপযোগী গ্রহের সংখ্যা, L হচ্ছে প্রাণ বিকাশের উপযোগী থেকে থাকলে তাঁর ভিতরে সত্যি সত্যি প্রাণের বিকাশ হবার সম্ভাবনা , I হচ্ছে সত্যি সত্যি প্রাণের বিকাশ হয়ে গেলে সেগুলো বিবর্তনে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত হয়ে অন্য বুদ্ধিমান প্রানির সাথে যোগাযোগ করার মতো বুদ্ধিমত্তা অর্জনের সম্ভাবনা এবং T হচ্ছে যে সময় পর্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী টিকে থাকতে পারে। এর কিছু কিছু সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বেশ ভালো ধারণা আছে, কিছু কিছু অনুমান করতে হয়। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী কার্ল সাগান ড্রেক সমীকরণ ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, এই গ্যালাক্সিতেই লক্ষ লক্ষ বুদ্ধিমান প্রাণীর সভ্যতার জন্ম হওয়ার কথা। আবার অনেক বিজ্ঞানী সেটা মোটেও বিশ্বাস করতে রাজী নন, তাদের ধারণা ডেকের সমীকরণ ব্যবহার করে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব প্রমাণ করা এতো সোজা না।

 (দ্বিতীয় পর্ব)

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.