বিজ্ঞানী বনাব চার্চ (দ্বিতীয় পর্ব)
[প্রথম পর্ব]
সেই যুগে এইরকম বই লিখা ছিল খুব সাহসের কাজ। তিনি যখন তার বইটি প্রকাশ করেছেন তার মাত্র দশ বছর আগে জিওর্দানো ব্রুনো নামে এক জ্যোতিবিজ্ঞানীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ব্রুনোর অপরাধ তিনি কোপার্নিকাসের মতামত বিশ্বাস করতেন। ব্রুনোকে তার বিশ্বাসের জন্য প্রথমে আট বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছিল এবং পুড়িয়ে মারার
সেই যুগে এইরকম বই লিখা ছিল খুব সাহসের কাজ। তিনি যখন তার বইটি প্রকাশ করেছেন তার মাত্র দশ বছর আগে জিওর্দানো ব্রুনো নামে এক জ্যোতিবিজ্ঞানীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ব্রুনোর অপরাধ তিনি কোপার্নিকাসের মতামত বিশ্বাস করতেন। ব্রুনোকে তার বিশ্বাসের জন্য প্রথমে আট বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছিল এবং পুড়িয়ে মারার
আগের মুহুর্ত পর্যন্ত ব্রুনোকে চাপ দেয়া হয়েছিল তিনি যেন কোপার্নিকাসের মতামত ত্যাগ করে বাইবেলের মতামতে ফিরে আসেন। ব্রুনো রাজি হন নি। শুধু রাজি হন নি তাই নয়- বিচারকদের দিকে তাকিয়ে শ্লেসভরে বলেছিলেন "বিচারক মহোদয়রা আমাকে শাস্তি দেয়ায় আমি যেটুকু ভয় পাচ্ছি আপনারা মনে হয় তাঁর থেকে বেশি ভয় পাচ্ছেন!"
এই রকম একটা পরিবেশে কোপার্নিকাসের মতবাদ প্রচার করা খুব সাহসের ব্যাপার। তবে চার্চ নিষেধ করে দেয়ার কারণে গ্যালিলিও কয়েক বছর একটু চুপচাপ থাকলেন। তখন তাঁর এক পুরানো বন্ধু পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন,গ্যালিলিও ভাবলেন এটাই সুযোগ। তিনি তখন আরেকটা বই লিখলেন, বইটি তিনজন মানুষের কথোপকথন হিসেবে লেখা, একজন টলেমীর মতবাদ বিশ্বাস করে (পৃথিবী হচ্ছে সৌরজগতের কেন্দ্র), আরেকটা কোপার্নিকাসের মতবাদ বিশ্বাস করে (সূর্য হচ্ছে সৌরজগতের কেন্দ্র ) এবং তৃতীয় জন একজন নিরপেক্ষ মানুষ। গ্যালিলিওর এই বইটি লেখা হয় ইতালীয় ভাষায়, বইয়ে কোপার্নিকাসের সমর্থকের তুখোড় যুক্তির কাছে টলেমির সমর্থক বারবার অপদস্ত হয় এবং এই বইটির কারণে গ্যালিলিও ধর্মযাজকের বিষ নজরে পরে।
১৬৩৩ সালে ক্যাথলিক চার্চ গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ দিয়ে ডেকে পাঠাল। গ্যালিলিও তখন বৃদ্ধ, প্রায় অন্ধ। এই বৃদ্ধ জ্ঞান তাপসকে তিনদিন একটি টর্চার সেলে অত্যাচার করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত হাটু ভেঙ্গে জোড় হাতে মাথা নিচু করে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। পোপ এবং ধর্মযাজকদের সামনে তিনি যে লিখিত বক্তব্য পড়েন সেটি ছিল এরকমঃ
"আমি ফ্লোরেন্সবাসী স্বর্গীয় ভিন্সেজিও গ্যালিলিওর পুত্র সত্তর বছর বয়স্ক গ্যালিলিও গ্যালিলি, সশরীরে বিচারের জন্যে এনেছি এবং বিখ্যাত ও সম্মানিত ধর্মযাজক এবং ধর্মবিরুদ্ধ আচরণের অপারাধে অপরাধী হয়ে বিচারকদের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে নিজ হাতে ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে শপথ করেছি যে, রোমের পবিত্র ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্ম সংস্থার দ্বারা যা কিছু শিক্ষাদান এবং প্রচার করা হয়েছে আমি তা বিশ্বাস করি, আগেই করেছি ভবিষ্যতেও করব। আমাকে বলা হয়েছিল সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রস্থল এই মতবাদটি মিথ্যা এবং ধর্মগ্রন্থ বিরোধী, আমাকে এই মতবাদ সমর্থন এবং প্রচার থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছিল। তারপরও আমি আমি এই মতাবাদকে সমর্থন করে একটি বই লিখেছিলাম এবং তার কারনে সাধারনের মনে সন্দেহ হতে পারে আমি খ্রিষ্টধর্ম বিরোধী। সকলের মন থেকে সন্দেহ দুর করার জন্যে আমি শপথ করে বলছি যে এই ভুল, মিথ্যা এবং ধর্মবিরুদ্ধ মত ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করছি। আমি আরো শপথ করে বলছি যে, এ ধরনের বিষয় সম্বন্ধে ভবিষ্যতে কিছু বলব না। শপথ নিয়ে আরো প্রতিজ্ঞা করছি আমাকে প্রায়শ্চিত্যের জন্যে যে নির্দেশ দেয়া হবে আমি হুবহু পালন করব। আমি যদি এই শপথ আর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করি তাহলে আমার জন্যে যে সব নির্যাতন এবং শাস্তির ব্যবস্থা আছে আমি তা মাথা পেতে গ্রহন করব।"
পৃথিবীর ইতিহাসে একজন বিজ্ঞানী এবং তার বিজ্ঞানচর্চার উপর ধর্মীয় মৌলবাদের এর চাইতে বড় নির্যাতনের আর কোন উধাহরণ আছে কিনা আমার জানা নেই। ক্যাথলিক চার্চ গ্যালিলিওকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল। তবে তার বয়স, স্বাস্থ্য এসবের কথা বিবেচনা করে করে আমৃত্যু নিজের ঘরে আটকে রাখা হয়। তার বইটি নিষিদ্ধ করা হয় এবং ১৮৩৫ সালের আগে সেই বইটি আর নতুন করে ছাপা হয় নি। শুধু তাইই নয় গ্যালিলিও মৃত্যুর পর তাকে মর্যদার সাথে সমাহিত না করে খুব সাদাসিধেভাবে কবর দেয়া হয়।
মহামতি গ্যালিলিও গ্যালিলির প্রতি যে অবিচার করা হয়েচিল, সেটি বুঝতে ক্যাথলিক চার্চের সময় লেগেছিল মাত্র সাড়ে তিনশত বছর। পৃথিবীর কত বড় বড় মনীষীর হাটুর সমান মেধা নিয়ে শুধুমাত্র লেবাস পরে তাদের উপর নিপীড়ন করার উদারহণ শুধু যে ক্যাথলিক চার্চে ছিল তা নয় অন্য ধর্মেও ছিল। শুধু যে অতিতে ছিল না নয় এখনও আছে।
[কোপার্নিকাসের মতবাদ বিশ্বাস করার কারণে জিওর্দানো ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।] |
এই রকম একটা পরিবেশে কোপার্নিকাসের মতবাদ প্রচার করা খুব সাহসের ব্যাপার। তবে চার্চ নিষেধ করে দেয়ার কারণে গ্যালিলিও কয়েক বছর একটু চুপচাপ থাকলেন। তখন তাঁর এক পুরানো বন্ধু পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন,গ্যালিলিও ভাবলেন এটাই সুযোগ। তিনি তখন আরেকটা বই লিখলেন, বইটি তিনজন মানুষের কথোপকথন হিসেবে লেখা, একজন টলেমীর মতবাদ বিশ্বাস করে (পৃথিবী হচ্ছে সৌরজগতের কেন্দ্র), আরেকটা কোপার্নিকাসের মতবাদ বিশ্বাস করে (সূর্য হচ্ছে সৌরজগতের কেন্দ্র ) এবং তৃতীয় জন একজন নিরপেক্ষ মানুষ। গ্যালিলিওর এই বইটি লেখা হয় ইতালীয় ভাষায়, বইয়ে কোপার্নিকাসের সমর্থকের তুখোড় যুক্তির কাছে টলেমির সমর্থক বারবার অপদস্ত হয় এবং এই বইটির কারণে গ্যালিলিও ধর্মযাজকের বিষ নজরে পরে।
১৬৩৩ সালে ক্যাথলিক চার্চ গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ দিয়ে ডেকে পাঠাল। গ্যালিলিও তখন বৃদ্ধ, প্রায় অন্ধ। এই বৃদ্ধ জ্ঞান তাপসকে তিনদিন একটি টর্চার সেলে অত্যাচার করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত হাটু ভেঙ্গে জোড় হাতে মাথা নিচু করে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। পোপ এবং ধর্মযাজকদের সামনে তিনি যে লিখিত বক্তব্য পড়েন সেটি ছিল এরকমঃ
"আমি ফ্লোরেন্সবাসী স্বর্গীয় ভিন্সেজিও গ্যালিলিওর পুত্র সত্তর বছর বয়স্ক গ্যালিলিও গ্যালিলি, সশরীরে বিচারের জন্যে এনেছি এবং বিখ্যাত ও সম্মানিত ধর্মযাজক এবং ধর্মবিরুদ্ধ আচরণের অপারাধে অপরাধী হয়ে বিচারকদের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে নিজ হাতে ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে শপথ করেছি যে, রোমের পবিত্র ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্ম সংস্থার দ্বারা যা কিছু শিক্ষাদান এবং প্রচার করা হয়েছে আমি তা বিশ্বাস করি, আগেই করেছি ভবিষ্যতেও করব। আমাকে বলা হয়েছিল সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রস্থল এই মতবাদটি মিথ্যা এবং ধর্মগ্রন্থ বিরোধী, আমাকে এই মতবাদ সমর্থন এবং প্রচার থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছিল। তারপরও আমি আমি এই মতাবাদকে সমর্থন করে একটি বই লিখেছিলাম এবং তার কারনে সাধারনের মনে সন্দেহ হতে পারে আমি খ্রিষ্টধর্ম বিরোধী। সকলের মন থেকে সন্দেহ দুর করার জন্যে আমি শপথ করে বলছি যে এই ভুল, মিথ্যা এবং ধর্মবিরুদ্ধ মত ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করছি। আমি আরো শপথ করে বলছি যে, এ ধরনের বিষয় সম্বন্ধে ভবিষ্যতে কিছু বলব না। শপথ নিয়ে আরো প্রতিজ্ঞা করছি আমাকে প্রায়শ্চিত্যের জন্যে যে নির্দেশ দেয়া হবে আমি হুবহু পালন করব। আমি যদি এই শপথ আর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করি তাহলে আমার জন্যে যে সব নির্যাতন এবং শাস্তির ব্যবস্থা আছে আমি তা মাথা পেতে গ্রহন করব।"
[ক্যাথলিক চার্চ ১৬৩৩ সালে ধর্মদ্রহিতার জন্যে গ্যালিলিওর বিচার করে। তার অপরাধ তিনি কোপার্নিকাসের মতবাদ বিশ্বাস করতেন] |
পৃথিবীর ইতিহাসে একজন বিজ্ঞানী এবং তার বিজ্ঞানচর্চার উপর ধর্মীয় মৌলবাদের এর চাইতে বড় নির্যাতনের আর কোন উধাহরণ আছে কিনা আমার জানা নেই। ক্যাথলিক চার্চ গ্যালিলিওকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল। তবে তার বয়স, স্বাস্থ্য এসবের কথা বিবেচনা করে করে আমৃত্যু নিজের ঘরে আটকে রাখা হয়। তার বইটি নিষিদ্ধ করা হয় এবং ১৮৩৫ সালের আগে সেই বইটি আর নতুন করে ছাপা হয় নি। শুধু তাইই নয় গ্যালিলিও মৃত্যুর পর তাকে মর্যদার সাথে সমাহিত না করে খুব সাদাসিধেভাবে কবর দেয়া হয়।
মহামতি গ্যালিলিও গ্যালিলির প্রতি যে অবিচার করা হয়েচিল, সেটি বুঝতে ক্যাথলিক চার্চের সময় লেগেছিল মাত্র সাড়ে তিনশত বছর। পৃথিবীর কত বড় বড় মনীষীর হাটুর সমান মেধা নিয়ে শুধুমাত্র লেবাস পরে তাদের উপর নিপীড়ন করার উদারহণ শুধু যে ক্যাথলিক চার্চে ছিল তা নয় অন্য ধর্মেও ছিল। শুধু যে অতিতে ছিল না নয় এখনও আছে।
কোন মন্তব্য নেই